আজ সে দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী মানুষ
ভোর বেলা ঘুম থেকে জেগে মোবাইলে তাকিয়ে দেখি হোয়াটসঅ্যাপে সুখবর।
স্যার, উপসহকারী প্রকৌশলী পদে চাকুরী চুড়ান্ত। অমুক তারিখে আমার সরকারি চাকুরীতে জয়নিং।
সাথে গেজেটটিও স্ক্যান করে দিয়েছে।
আলহামদুলিল্লাহ!
সুখবর শুনতে কার না ভালো লাগে!
নয় বছর আগে যখন সে প্রথম আমার চেম্বারে এসেছিলো তখন সে মৃতপ্রায়। একজন তাকে সাথে করে নিয়ে এসেছে। ইয়া বড়ো একটা পেট। মানে স্প্লিন তার পুরো পেট দখল করে আছে। কেউ একজন তার অপারেশন করাবে বলে সার্জনের কাছে এনেছে। অপারেশনের সিদ্ধান্ত প্রায় চুড়ান্ত। অপারেশন পূর্ব রুটিন পরীক্ষায় রক্তের শ্বেত কণিকার পরিমাণ অনেক বেশি দেখে অপারেশন স্থগিত রেখে আমার কাছে পাঠানো হয়েছিল। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হলাম তার ক্রনিক মাইলয়েড লিউকেমিয়া বা সংক্ষেপে সিএমএল।
সিএমএল-এ স্প্লিন অনেক বড়ো হতে পারে। কিন্তু তার জন্য স্প্লিন অপসারণের কোনো প্রয়োজন হয়না। ওষুধেই স্প্লিন স্বাভাবিক হয়ে যায়। এই রোগের আধুনিক চিকিৎসা এখন বাংলাদেশেই বাংলাদেশের ওষুধেই সম্ভব।
সেই থেকে সে নিয়মিত চিকিৎসা নিয়ে আসছে। ওষুধ কেনার টাকা কোন এক দানবীর জোগান দিয়েছেন। পেয়েছে নতুন জীবন। কখনো সে ভিজিট দিতো, কখনো দিতোনা। ভিজিটের প্রসঙ্গ এলে বলতাম তোমার ইচ্ছা। কখনো ফোনেই চিকিৎসা চলে। আসলে ওর মুখে একটা দ্বিতীয় জীবন পাওয়া, একটা সুস্থতার হাসি দেখতে পাওয়াটাই আমার তৃপ্তি। প্রথমে পলিটেকনিক থেকে ডিপ্লোমা, পরে ডুয়েট থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং।
অনেক দিন বলেছে, স্যার, আমার জন্য দোয়া করবেন আমি যেন একটা সরকারি চাকুরী পাই। আজ সে চাকুরী পেয়েই আমাকে জানালো। সঙ্গত কারণেই নাম উল্লেখ করছি না। ফেসবুকে অনেক রোগী সম্পর্কে আমার লেখা পড়ে সে বলতো, স্যার আমার সম্পর্কে কবে লিখবেন?
না জানি আজ তার হাসি মুখে দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী মানুষের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠেছে।
Comments
আজ সে দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী মানুষ — No Comments
HTML tags allowed in your comment: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>