গ্রাফট ভার্সাস হোস্ট ডিজিজঃ বেড়ায় ক্ষেত খাওয়া রোগ
বিশ্বের অনেক যুদ্ধবিধ্বস্ত বা গৃহযুদ্ধ কবলিত দেশের শান্তি শৃঙ্খলা নিরাপত্তা পূণঃস্থাপনের জন্য জাতিসংঘের শান্তি রক্ষী বাহিনী মোতায়েন করা হয়। ধরুন আপনার দেশের শান্তি শৃঙ্খলা বিপর্যস্ত, ধ্বংস কিংবা অকেজো হয়ে গেছে এবং আপনার দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাই আপনার দেশের ক্ষতির কারণ হয়ে গেছে এবং তা আর কোন অবস্থাতেই ঠিক করা সম্ভব নয়। তখন আপনি অন্য একটি দেশের সঙ্গে চুক্তি করলেন যাতে সেই দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আপনার দেশের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা অর্পণ করা হলো। এখন এই বিদেশি বাহিনী আপনার প্রয়োজন মতো সবকিছু পূণস্থাপন করে দিতে পারে, অথবা বিশ্বাস ঘাতকতা করে আপনার দেশের অবশিষ্ট আরও ধ্বংস করে দিতে পারে, অথবা সম্পূর্ণ ধ্বংস না করে কিছু স্থায়ী সমস্যা তৈরি করে রাখতে পারে। গ্রাফট ভার্সাস হোস্ট ডিজিজ বিষয়টি সেরকম।
একিউট মাইলয়েড লিউকেমিয়া নামের ব্লাড ক্যান্সারের কিছু কিছু শুধু মাত্র কেমোথেরাপিতেই সম্পূর্ণ নির্মুল হয়। আবার কিছু ক্ষেত্রে কেমোথেরাপির পর বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করতে হয়। এই প্রক্রিয়ায় রোগীর রক্ত তৈরি হয় যে যায়গায় সেই অস্থিমজ্জা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে একজন সুস্থ মানুষের অস্থিমজ্জা কোষ প্রবেশ করানো হয়। দাতার অস্থিমজ্জা কোষ থেকে উৎপন্ন এবং তার সাথে আগত দাতার শ্বেতকনিকা এরপর থেকে রোগীর শরীরে রোগ প্রতিরোধ করে থাকে। দাতার এই শ্বেতকনিকা যদি প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণে না থাকে তাহলে তা রোগীর ক্ষতির কারণ এমনকি প্রাণহানিও ঘটাতে পারে। দাতার শ্বেতকনিকাগুলো রোগীর শরীরের বিভিন্ন টিস্যু নষ্ট করে দিয়ে স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে।
প্রদর্শিত ছবিগুলো ৩১ বছর বয়সী একজন রোগীর। প্রায় আড়াই বছর আগে এসেছিল একিউট মাইলয়েড লিউকেমিয়া নিয়ে। খারাপ প্রোগ্নোস্টিক গ্রুপের রোগী। রোগ নির্ণয়ের শুরুতেই বলেছিলাম বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট লাগবে। কিন্তু অনেক টাকার ব্যাপার। কেমোথেরাপি দিয়ে চিকিৎসার খরচই যে সামলাতে পারে না সে কি করে বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করবে!
ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল যে তার দুবাইয়ের মনিব চিকিৎসার সম্পূর্ণ খরচ বহন করেছিলেন। আরও সৌভাগ্য ছিলো যে তার বোনের সাথে তার টিস্যু মিল ছিলো। হাসপাতালে প্রথম মাসের ইন্ডাকশন কেমোথেরাপি চলাকালেই তার ও তার বোনের টিস্যু টাইপিং করা হয় বিএসএমএমইউ থেকে। সফল বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টের পূর্ব শর্ত ম্যাচড ডোনার থাকতে হয়। ইন্ডাকশন কেমোথেরাপি শেষ হওয়া মাত্র রোগী ও তার বোন চলে যায় ভারতের একটি প্রতিষ্ঠানে। ট্রান্সপ্লান্ট সফল ভাবেই শেষ হয়েছে।
জীবনে বেচে গেছে। চাকুরিও করছে। কিন্তু রয়ে গেছে গ্রাফট ভার্সাস হোস্ট ডিজিজ। যাকে বলা হয় ক্রোনিক গ্রাফট ভার্সাস হোস্ট ডিজিজ। যদিও তা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। তার মুখমন্ডলে অনেক দাগ। সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে গেছে। মুখ ছোট হয়ে গেছে। পুরাপুরি হা করতে পারেনা। জিহবায় স্বাদ পায় না। মুখগহ্বর শুখনো থাকে। বারবার পানি খেতে হয়। হাতের তালুতে ক্ষত। নখ নষ্ট হয়ে গেছে। পায়ের তলার চামড়াতেও ক্ষত। হয়তো আজীবন ওষুধ খেতে হবে। তবুও শান্তি যে সে জীবনে বেচে গেছে এবং কর্মক্ষম আছে।
Comments
গ্রাফট ভার্সাস হোস্ট ডিজিজঃ বেড়ায় ক্ষেত খাওয়া রোগ — No Comments
HTML tags allowed in your comment: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>