থ্যালাসেমিয়ায় অবহেলা নয়
দেড় বছর আগে একবার এসেছিলো রক্ত শুন্যতা নিয়ে। উপসর্গ ছিলো শরীর দূর্বলতা, ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া, ক্ষুধা মন্দা। সাথে পেটে একটি চাকা, মানে লিভার স্প্লিন বড় হয়ে গেছে। লিভার স্প্লিন এতো বড় যে তার চাপেই পেট ভর্তি থাকে। বেশি খেতে পারেনা।
পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানা গেছে ইবিটা থ্যালাসেমিয়া। বংশগত রোগ শুনে তার বাবা কিছুতেই মানতে পারছিলেননা। তাদের স্বামী স্ত্রী দুজনের শরীরেই আছে বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না। আসলে বাহক হলে এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় না। বাহক অর্থ হিমোগ্লোবিনের জন্য দায়ী একজোড়া জিনের একটি অসুস্থ, আরেকটি সুস্থ। এই জোড়ার একটি আসে মায়ের শরীর থেকে আরেকটি বাপের শরীর থেকে। বাবা মা বাহক বলেই তাদের কোন লক্ষণ নেই। আর লক্ষণ নেই বলেই বংশগত রোগ বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।
আজ দেড় বছর পর এসেছে। হিমোগ্লোবিন ৬.৪। দেড় বছর আগের প্রেস্ক্রিপশন অনুযায়ী কোন চিকিৎসা নেয়নি সে। রক্ত পরীক্ষা করে প্রয়োজন অনুযায়ী রক্ত নেয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।
কেন?
হোমিও চিকিৎসা চলেছে।
কোন উন্নতি?
তা আর বলতে। উন্নতি হলে তো আর আপনার কাছে নিয়ে আসতাম না। রোগীর মায়ের উত্তর।
ইশ! হোমিওতে ভাল হলে বিদ্যাটা আমিও শিখে ফেলতাম। বিদ্যা যাই হোক আমার রোগী ভাল হওয়া নিয়ে কথা।
প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করে পরের দিন মেয়কেও নিয়ে এলেন মহিলা। কাগজ পত্রাদি দেখে মনে পড়লো বছর দেড়েক আগে এই মেয়েকেও দেখেছিলাম। এখন বয়স ১৬। নিকাব পড়ে এসেছে। নিকাব খুলতেই আঁতকে উঠলাম। কি চেহারা! চোয়াল দুটো সামনে বড় হয়েছে। দাঁতগুলো বেরিয়ে এসেছে, ঠোঁট দুটো দাঁতের মাড়ি সামলাতে পারছেনা। ছোট বাচ্চারা রাক্ষস বা ড্রাকুলা মনে করে ভয় পাবে। পেটে বিশাল চাকা। মানে লিভার স্প্লিন বিশাল। স্তন বড় হয়নি। বগল বা নাভির নিচে চুল গজায়নি। মাসিক শুরু হয়নি।
আসলে বাড়ন্ত বয়সে হিমোগ্লোবিন ক্রমাগত কম থাকলে শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি হয়না। উপরন্তু এই সমস্ত থ্যালাসেমিয়া রোগী বিশেষ করে ইন্টারমিডিয়া রোগীদের শরীরে রক্ত গ্রহণ ছাড়াই আয়রন বেশি থাকে। এই অতিরিক্ত আয়রন হরমোন প্রস্তুতকারী গ্লান্ডগুলোতে জমা হয়ে তা নষ্ট করে দেয় বা তার কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। তখন শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি নষ্ট হয়।
ছেলেটার বয়স ১৮-১৯। দাড়ি মোছ হালকা বুঝা যায়। আলাদা করে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম, বীর্যপাত হয়?
জ্বী, হয়।
ভাগ্যিস, ছেলেটা অন্তত এখনো ঠিক আছে। মাকে ডেকে প্রয়োজনীয় উপদেশ দিয়ে বললাম, আর অবহেলা করবেন না। আর হ্যাঁ। যদি পানি পড়া নেয়ার ইচ্ছে হয় আমাকে বলবেন। আমি পানি পড়া দিতে পারি।
যা হবার হয়ে গেছে, বাবা। আর অবহেলা করবো না। এখন থেকে নিয়মিত আপনার শরণাপন্ন হবো।
Comments
থ্যালাসেমিয়ায় অবহেলা নয় — No Comments
HTML tags allowed in your comment: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>