থ্যালাসেমিয়া বাহকের কোন চিকিৎসা লাগেনা
বয়স ২৬-২৭। স্বাস্থ্যবতী সুন্দরী মহিলা। মাঝেমাঝে অজ্ঞান হয়, খিচুনি হয়। মাথাঘোরানো, অস্থিরতায় ভুগছে। বুঝলাম হিস্টেরিয়ার রোগী। সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যাওয়ার কথা।
আমার কাছে কেন?
আমি বিটা ট্রেইটের রোগী।
তাতে কি? বিটা ট্রেইটের রোগী স্বাভাবিক জীবন যাপন করে।
আমার রক্ত কম থাকে। দেখেন কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেছি।
রক্ত নিতে হয়?
না। বাচ্চাটা যখন পেটে ছিলো তখন নিতে হয়েছে।
রোগিণীকে বছর দেড়েক আগে দেখেছিলাম। আমার হাতেই নির্ণীত। বিটা থ্যালাসেমিয়া ট্রেইট। ভাই নাই। পাঁচ বোনের সবাই বিটা থ্যালাসেমিয়া ট্রেইট। এ নিয়ে সকলের পরিবারেই অশান্তি। থ্যালাসেমিয়া রোগীরা ৩০ বছর বয়সের মধ্যেই মারা যায় – এরকম ধারণা নিয়ে আছে তার স্বামী। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখালাম তার রক্তশূন্যতা নাই। হিমোগ্লোবিন ১১.৩। আয়রনের ঘাটতি নাই। রক্তস্বল্পতা জনিত কোন উপসর্গ তার থাকার কথা নয়।
স্যার, তাহলে আমাকে ওজন কমানোর ওষুধ দেন। জাহাঙ্গির কবির স্যারের রেসিপি খুব কঠিন।
ও আচ্ছা! আপনি জাহাঙ্গীর সাহেবের কিটোডায়েট খাচ্ছেন? কেন?
আমি খুব মোটা। তাই স্বামী আমাকে খুব কথা শোনায়।
বুঝলাম কিটোডায়েটেই তার মাথা ঘুরছে। এসিস্ট্যান্ট মহিলাকে ডেকে বললাম, দেখো তো এই মহিলা কি মোটা?
না।
রক্তশূন্যতা বুঝা যায়?
কই নাতো। ফর্সা মানুষ।
বললাম, আপনার স্বামীকে পিটানো দরকার। ৩০ বছর বয়সের মধ্যেই স্ত্রী মারা যাবে, অসুস্থ, অসুস্থ সন্তান জন্ম দিচ্ছে ইত্যাদি করে আপনার উপর একটা চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছে যাতে সে আরেকটা বিয়ে করতে পারে।
আমার কথা শুনে মহিলা দুচোখে পানি আটকাতে পারলনা।
আপনি ঠিকই বলেছেন। সবসময় আমার ভুল ধরে, আমাকে খোচাখুচি করে। আমি ঝগড়া করতে পারিনা। উত্তর দিতে গেলে আমার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়, আমি অজ্ঞান হয়ে যাই, খিচুনি শুরু হয়। আমি যতই বলি, আমি ট্রেইট, বাহক। আমি রোগী নই। কিন্তু আমার কথা শোনেনা।
বললাম, আপনার স্বামীকে একদিন নিয়ে আসেন। বুঝিয়ে বলি। আপনারা যত দরকার বাচ্চা নিতে পারেন।
মানুষের কতো সমস্যা!
Comments
থ্যালাসেমিয়া বাহকের কোন চিকিৎসা লাগেনা — No Comments
HTML tags allowed in your comment: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>