দোষ কার?
থ্যালাসেমিয়া রোগ জন্মগত ও বংশগত। এই রোগে রক্তের হিমোগ্লোবিন কমে যায়। বেঁচে থাকার জন্য এই রোগীদের কারও কারও নিয়মিত অন্যের রক্ত গ্রহণের প্রয়োজন হয়, কারও কারও ক্ষেত্রে বিশেষ অবস্থায় রক্ত নিতে হয়। কারও ক্ষেত্রে লক্ষণই প্রকাশ পায় না। শরীরের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য তৈরী বা প্রকাশের জন্য প্রতিটি কোষে উত্তরাধিকার সূত্রে তথ্য সন্নিবেশিত থাকে। বায়োলজির ভাষায় একে জিন বলে। রক্তের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ও কোয়ালিটি নির্ধারণের জন্য যে জিন দায়ী তার ত্রুটির কারনে থ্যালাসেমিয়া রোগ হয়। সাধারণত প্রতিটি জিন একজোড়া করে থাকে যার একটি বাবা ও আরেকটি মায়ের শরীর থেকে সন্তানের শরীরে প্রবাহিত হয়।
হিমোগ্লোবিনের একজোড়া জিনের একটি অসুস্থ বা ত্রুটিযুক্ত থাকলে অর্থাৎ বাবা-মার একজন থেকে ত্রুটিপূর্ণ জিন সন্তানের শরীরে প্রবাহিত হলে তাকে বাহক বলা হয় এবং কোন লক্ষণ সাধারণত প্রকাশ পায় না। যদি বাবা মা উভয়ের শরীর থেকে ত্রুটিপূর্ণ জিন আসে অর্থাৎ সন্তানের শরীরে উভয় জিন ত্রুটিপূর্ণ হলে পূর্ণ লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। অর্থাৎ তখন নিয়মিত রক্ত গ্রহণের প্রয়োজন হতে পারে। এরকম রোগীর উভয় জিন একইরকম ত্রুটিযুক্ত হলে তাকে হোমোজাইগাস থ্যালাসেমিয়া বলা হয়।
দুই বছর বয়সী বাচ্চাটি এরকম থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। ছয় মাস বয়স থেকে নিয়মিত রক্ত নেয়। কোন পরীক্ষা ছাড়াই। থ্যালাসেমিয়া রোগ যে পরীক্ষা দ্বারা সাধারণত নির্ণীত হয় সেই হিমোগ্লোবিন ইলেক্ট্রোফোরেসিস রিপোর্ট নরমাল পাওয়া গেল। ফলে জেনেটিক টেস্টিং করে শিওর হওয়া গেল যে বাচ্চা homozygous beta thalassaemia আক্রান্ত রোগী। অর্থাৎ তার এই থ্যালাসেমিয়ার জন্য বাবা ও মা উভয়ই সমান অংশীদার। অথচ বাচ্চাটির বাবা এজন্য মাকে দায়ী করছে।
মা একাই বাচ্চা নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে। বাচ্চাটি কাঁদছে। মা’র চোখেও পানি। বাবা আসেনা। খোঁজ খবর নেয় না। বাচ্চার মাকে জিজ্ঞেস করলাম, ডিভোর্স হয়েছে?
কাগজে কলমে হয়নি, তবে বাস্তবে তাই।
Comments
দোষ কার? — No Comments
HTML tags allowed in your comment: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>