নাড়ি ছেঁড়া ধন
নাড়ি ছেঁড়া ধন।
পশুদের ক্ষেত্রে মায়ের নাড়ি ছিঁড়েই প্রসুপ্ত বাচ্চা আলাদা হয়। তবে মানুষের ক্ষেত্রে নাড়িটি কাটা হয়। সে হিসেবে নাড়ি কাটা ধন বললেই হয়ত যৌক্তিক হয়। কিন্তু বাবাদেরও কি নাড়ি থাকে!!
ভদ্রলোক হাতে একটা ব্লাড ফিল্ম রিপোর্ট নিয়ে এসেছেন। ননস্পেসিফিক ফাইন্ডিং। মানে বিশেষ কোন সমস্যা নাই।
স্যার, আমার রিপোর্টটা একটু দেখুন।
রিপোর্ট তো ভালো। এটা কেন করিয়েছেন?
ব্লাডক্যান্সার আছে কিনা দেখতে চেয়েছি।
আপনার শারীরিক অসুবিধা কি হয়?
প্রচন্ড ব্যাথা। বুকে। হাতে। পায়ে। সারা শরীরে। খাওয়ার রুচি নাই।
কতদিন?
প্রায় মাস খানেক।
তো ব্লাডক্যান্সারের চিন্তা কেন হচ্ছে? আপনাকে দেখে তো তেমন কিছু সন্দেহ হচ্ছেনা।
স্যার, কয়েকদিন আগে স্বপ্নে দেখেছি আমার মেয়ের রোগ আমার শরীরেও আছে।
ভদ্রলোকের ১১ বছরের মেয়েটা ব্লাডক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ৩২ দিন আগে মারা গেছে। তার কথায় ঢাকার একজন প্রখ্যাত চিকিৎসকের চিকিৎসাধীন ছিল। তিনি কিছুই করার সুযোগ পাননি। তার মাস খানেক আগে এপেন্ডিসাইটিস অপারেশন হয়। সেই থেকে আর সুস্থ্য হয়নি। মারা যাওয়ার কয়েকদিন আগে ব্লাডক্যান্সার নির্ণয় হয়।
কোনভাবেই বুঝাতে পারলাম না যে তার রিপোর্ট খারাপ নয়। নিজেই আবার রিপোর্ট করে বললাম, দেখুন আপনি পুরাপুরি সুস্থ্য আছেন। আপনার ব্লাডক্যান্সার নাই।
স্যার, ব্লাডক্যান্সার কি ছোঁয়াচে?
না, কখনওই না।
এটা কি বংশগত? মানে থ্যালাসেমিয়ার কথা শুনেছিলাম।
না। তাও নয়।
আহ! আল্লাহ যদি আমার জীবনের বিনিময়ে আমার মেয়েটাকে সুস্থ্য করে দিতেন!
সাইকোসোমাটিক হয়তোবা। সাইকিয়াট্রিস্টরা ভালো বলতে পারেন। সন্তান হারানোর বেদনা সহ্য করতে পারছেন না। হৃদয়ের ব্যাথা বুকে, পেটে, সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষ তার বাবা মা মায়ের মৃত্যুতেও এতোটা কষ্ট পায়না যতটা পায় সন্তানের মৃত্যুতে। স্ত্রী বা স্বামীর মৃত্যুতেও না। নিজের জীবনও তুচ্ছ মনে হয় সন্তানের মৃত্যুর কাছে। এ বেদনা খুবই কঠিন, গভীর। পাশে বসে থাকা তার স্ত্রী আঁচল দিয়ে চোখ মুছছেন আর ভদ্রলোক ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আমার কথাগুলো গিলছেন। চোখে পানি নেই। বাবাদের চোখে পানি থাকতে নেই। বুকে ব্যাথা থাকতে নেই। বাবাদের হতে হয় পাহাড়ের মত অটল, নিশ্চুপ।
Comments
নাড়ি ছেঁড়া ধন — No Comments
HTML tags allowed in your comment: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>