পিসিআর নেগেটিভ মানেই নেগেটিভ নয়।
পিসিআর টেস্টের সেন্সিটভিটি অর্থাৎ সত্যিকারের কোভিড রোগীদের ক্ষেত্রে পজিটিভ রেজাল্ট পাওয়া যায় ৬০-৭০% ক্ষেত্রে। আরও সুনির্দিষ্ট করে বললে স্পেসিমেন অনুযায়ী bronchoalveolar lavage-এ ৯৩%, sputum-এ ৭২%, nasal swab-এ ৬৩% এবং pharyngeal swab-এ ৩২%। এটা অন্য দেশের একটা স্টাডির রেজাল্ট। আমাদের দেশে nasal swab টেস্ট করা হচ্ছে। অর্থাৎ এই টেস্টে ৩৭% ব্যক্তির শরীরে সত্যিকারের কোভিড১৯ ইনফেকশন থাকলেও তা নেগেটিভ দেখায়। এই রোগীরা নেগেটিভ চিহ্নিত হওয়ায় কম্যুনিটিতে রোগ ছড়ানোর খুবই ঝুকিপুর্ণ সোর্স। যদিও কোভিড১৯ জীবাণু শরীরে ঢোকার পর থেকেই পিসিআর পদ্ধতিতে এটি নির্নয় করা যায়, কিন্তু আমাদের ব্যবস্থাপনায় স্পেসিমেন সংগ্রহ থেকে রেজাল্ট পাওয়া পর্যন্ত বেশ কয়েকদিন সময় লেগে যায়।
অন্যদিকে রেপিড টেস্টের সাথে ক্লিনিক্যাল প্যারামিটার দিয়ে ডাক্তাররা সহজেই রোগ নির্ণয় করতে পারে। এতে দুই ধরনের এন্টিবডি দেখা হয়- IgG ও IgM। IgM বর্তমান ও সাম্প্রতিক এবং IgG সাম্প্রতিক ও পুরোনো ইনফেকশন নির্দেশ করে। কোভিড ভাইরাস শরীরে ঢোকার ৪-৭ দিনের মধ্যে IgM এন্টিবডি তৈরি হয়ে ৭ সপ্তাহ পর্যন্ত থাকে। আর ১০-১৪ দিনের মধ্যে IgG এন্টিবডি শরীরে তৈরি হয়ে অনেকদিন পর্যন্ত থাকে, তবে কতদিন থাকে তা এখনো গবেষণার বিষয়। সাথে এন্টিজেন চেক করলে রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা আরও বাড়ে। সবকিছুর সাথে ডাক্তার যদি রোগীর লক্ষণ বিবেচনা করে তাহলে রোগ নির্ণয় সহজ হয়ে যায়। যখন পিসিআর ছিলো না, সেরকম বহু বছর ধরেই চিকিৎসকরা এভাবেই অনেক রোগ নির্ণয় করে এসেছেন। বলছি না যে পিসিআর লাগবে না। এটা পাশাপাশি থাকুক। কারণ RT-PCR এবং IgM এন্টিবডি টেস্ট একত্রে ব্যবহার করা হলে এর সেন্সিটিভিটি হয় ৯৮.৬%। ভারতের পুনেতে ELISA ভিত্তিক এন্টিবডি টেস্টের কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখা গেছে সেন্সিটভিটি ৯২% এবং স্পেসিফিটি ৯৭%। কোভিড জীবাণু শরীরে ঢোকার প্রথম পাঁচ দিনের পর যদি IgM ও IgG কম্বাইন্ড ব্যবহার করা হয় তাহলে রোগ নির্নয়ের হার ৯৫%-এর বেশী বলে বলা হচ্ছে।
শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রেই কোভিড১৯ ইনফেকশন লক্ষণ বিহীন বা সামান্য লক্ষণযুক্ত থাকে। আপাত সুস্থ এরকম মানুষেরা কম্যিউনিটিতে কিন্তু ঠিকই রোগ ছড়াচ্ছে। একটা পর্যায়ে তাদের শরীরে ইম্যুনিটি তৈরি হচ্ছে এবং হার্ড ইম্যুনিটির অংশ হয়ে ভুমিকা রাখছে। যদি ব্যাপকভাবে রেপিড টেস্ট করা হয় তাহলে কম্যুনিটিতে ইনফেকশনের সরূপ বুঝা সহজ হবে। এতে আমাদের পলিসি নির্ধারণ সহজ হবে। আমরা লক্ষণ যুক্ত রোগিদেরই টেস্ট করে শেষ করতে পারছি না। সেখানে লক্ষণ বিহীন ব্যক্তিদের RT-PCR টেস্ট করার সামর্থ্য আমরা রাখিনা। উন্নত দেশগুলোকে তাদের মতো করে আমরা সবকিছু ফলো করতে পারবোনা। আমাদেরকে আমাদের পদ্ধতি উদ্ভাবন করতে হবে।
রেপিড টেস্ট অনেক দেশে ব্যবহার হচ্ছে। এই টেস্ট সার্ভেলেন্সের জন্য খুবই উপযোগী। IgG এন্টিবডি যেহেতু শরীরে দীর্ঘদিন থাকে কাজেই তা কোভিড থেকে সুরক্ষা দিবে এটাই স্বাভাবিক। কেবলমাত্র এই পরীক্ষা করেই জানা যেতে পারে যে একজন ব্যক্তি কোভিডের বিরুদ্ধে সুরক্ষিত কি না, যা RT-PCR-এ বলা সম্ভব নয়। ELISA-তে সময় লাগে ২-৩ ঘন্টা আর রেপিড Immunoassay টেস্ট কিটে সময় লাগবে ১৫ মিনিটি বলে বলা হচ্ছে, যা ডায়াবেটিস রোগীর গ্লুকোজ দেখার মত সহজ। যদিও দুটোই রেপিড কিট। যেভাবে মানুষ বাইরে বের হচ্ছে তাতে এখন দরকার ব্যাপক আকারে এন্টিবডি স্ক্রিনিং। কারা আক্রান্ত হয়নি তাদেরকে খুঁজে বের করার সময় আসছে সামনে। এটা করে যারা ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ্য আছেন তারা অন্তত নিজেদেরকে নিরাপদ ভাবতে পারেন বা তাদেরকে কাজে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া যায়। আবার এই সমস্ত ব্যক্তির প্লাজমা ব্যবহার করে কোভিড১৯ রোগীর চিকিৎসার বিষয় বিবেচনা করা যেতে পারে। আর যাদের শরীরে এন্টিবডি পাওয়া যাবেনা তাদের চলাফেরা সীমিত করা যেতে পারে। এতে করে আমাদের অর্থনীতি বাঁচবে।
তথ্যসূত্রঃ
১. https://jamanetwork.com/journals/jama/fullarticle/2765837…
২. https://www.news18.com/
৩. https://www.assaygenie.com/rapid-covid19-antibody-detection…
৪. https://thenativeantigencompany.com/why-we-need-antigen-an…/
Comments
পিসিআর নেগেটিভ মানেই নেগেটিভ নয়। — No Comments
HTML tags allowed in your comment: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>