বোনম্যারো পরীক্ষা, বিএমটি, বিএমডি এক নয়
বিএমটি আমাদের দেশের স্বাস্থ্য সার্ভিসে একটি সাম্প্রতিক সংযোজন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঘটা করে এটি শুরু হওয়ার পর এখন অনেকেই এই নামটির সাথে পরিচিত। কিন্তু এটি আসলে কি এটা অনেক শিক্ষিত লোকও জানেনা। প্রেশক্রিপশনে বোন ম্যারো পরীক্ষার উপদেশ পেয়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের উচ্চশিক্ষিত ম্যানেজারকেও আমাকে উদ্দেশ্য করে বলতে শুনেছি, স্যার, আপনি তো বিএমটিতে উচ্চতর পড়াশুনা করেছেন। ভালোই হল। আজ আমাদের একটা একটা বোন ম্যারো করতে হবে।
যাইহোক, প্রায় এক মাস ধরে জ্বরে ভোগা ছেলেকে নিয়ে এসেছে তার মা। রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে রক্ত শুন্যতা আছে, সাথে শ্বেত কণিকা ও প্লেটলেটও কম। বেশ কয়েকটি রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে তা ক্রমশ কমছে। একজন সিনিয়র কলিগ পাঠিয়েছেন তাকে আমার কাছে। রোগ নির্ণয়ের জন্য পরবর্তী ধাপের কয়েকটি পরীক্ষাতেও যখন রোগ ধরা পড়লনা তখন তাকে বোন ম্যারো পরীক্ষার জন্য উপদেশ দিলাম। শরীরের নির্দ্দিষ্ট কিছু হাড়ের ভিতরে রক্তের কণিকা তৈরী হয়। তৎসম বাংলায় যাকে অস্থিমজ্জা বলা হয়। বোন ম্যারো পরীক্ষা হল হাড়ের ভিতরের এই অস্থিমজ্জা বিশেষ প্রক্রিয়ায় বের করে মাইক্রোস্কোপে পরীক্ষা করা। এতে রক্তের অনেক রোগের কারণ ধরা পড়ে। কারণ আগেই বলেছি যে এই বোন ম্যারোতেই রক্তের কণিকাগুলো তৈরী হয়।
রোগীর সাথে থাকা তার অশিক্ষিত মামী বলছেন, ও। বিএমটি? এইটা তো ঢাকা মেডিকেলে হয়। আমি করিয়ে নিতে পারবো।
বললাম, বিএমটি নয়, বোন ম্যারো পরীক্ষা। বিএমটি অন্য জিনিষ। বিএমটি হল অস্থি মজ্জা প্রতিস্থাপনের নাম। একটি চিকিৎসা। আর আমি যা দিচ্ছি তা হল একটা পরীক্ষা।
প্রেশক্রিপশনে স্পষ্ট করে লিখে দিলাম, Bone Marrow Study।
স্যার, এটা কি ঢাকা মেডিকেলে হয়?
হ্যাঁ। অবশ্যই হয়।
ওখান থেকেই তাহলে করি।
হ্যাঁ। করতে পারেন।
আমি আবার ওখানে চাকুরী করি তো। আমার লোক আছে। করে নিতে পারবো।
ঠিক আছে। করুন।
দুই দিন পর আমাকে যে রিপোর্ট দেখাতে নিয়ে এলো তা দেখে আমি হতাশ। মোটামুটি বিরক্তির সাথেই কথা বলতে শুরু করলাম। আপনাদের কি মাথা খারাপ হয়েছে?
কেন?
এটা কি পরীক্ষা করেছেন?
কেন? আপনি যা করতে বলেছেন তাই তো করেছি।
বিএমডি পরীক্ষা করে নিয়ে এসেছেন। বিএমডি মানে Bone Mineral Density টেস্ট বা Bone Densitometry । ১৫০০ টাকা খরচ করে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিভাগ থেকে। এ পরীক্ষায় হাড়ের ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বা হাড় কতখানি মজবুত তা নির্ণয় করা হয়। ১৬ বছরের একটা ছেলের বিএমডি রিপোর্ট দিয়ে আমি কি করব ভেবে পাচ্ছিনা।
রোগীর মামী এবার বলছেন, তাই তো আমি বলি। আমার রোগীকে ওই বড় মেশিনটাতে ঢুকালো কেন! আমি তখনই প্রতিবাদ করেছিলাম স্যার। যেই ম্যাডাম ছিলেন ওখানে, তাকে বললাম যে এই পরীক্ষায় তো পিঠের শিরদাঁড়া থেকে সূই দিয়ে পানি বের করা হয়। (লে ঠ্যালা। এবার অন্য প্রসঙ্গ। মানে CSF কালেকশনে চলে গেলো।) আমাকে উনি উত্তর দিয়েছিল যে না, এই পরীক্ষা এই রকমই। আচ্ছা স্যার। আমরা না হয় অশিক্ষিত মানুষ। উনিও কি আপনার প্রেশক্রিপশনটা পড়ে বুঝেন নাই?
রোগীর মায়ের মন খারাপ। বলছেন, আসলে নিজের কাজ নিজে করাই ভালো। দালাল ধরার ফল এরকমই হয়। আমি বলেছিলাম যে স্যারের এখানেই পরীক্ষাটা করাই। আর তুমি আমাকে ভুল জায়গায় নিলে…….।
এবার বুঝি ভাবী ননদে লেগে যায়….. ! আসলে দুই জনেই দুই হাসপাতালের আয়ার কাজ করে। এর মধ্যে রোগীর মা ঢাকার বাইরে একটি সরকারী হাসপাতালে। আর মামী ঢাকার একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে, কিন্তু পরিচয় দিয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কাজ করে। ভাবছিলাম এরাও হয়ত দালালী করে, দালালী করতে গিয়ে হয়তো কতজনেরই না ক্ষতি করেছে! আজ দালালীর পাল্লায় আজ নিজেরা পড়েছে।
Comments
বোনম্যারো পরীক্ষা, বিএমটি, বিএমডি এক নয় — No Comments
HTML tags allowed in your comment: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>