শুশঃ পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন সভ্যতার শহর
ইরানে এসে যেসব ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শনের ইচ্ছা ছিল তার অন্যতম ছিল শুশ। পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন সভ্যতার শহর শুষ। আজ থেকে প্রায় ৭০০০ বছর আগে এই শহর প্রতিষ্ঠিত হয়ে এখনও তার অস্তিত্ব বজায় রেখেছে। প্রাচীন ব্যাবিলনের চেয়েও পুরোনো এর ইতিহাস। এটি বর্তমান ইরানের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলীয় খোজেস্তান প্রদেশে অবস্থিত। এলামাইট, পার্সিয়ান ও পার্থিয়ান রাজাদের প্রধান শহর ছিল এটি। বাইবেলের ড্যানিয়েল পুস্তকে এ শহরের উল্লেখ আছে। প্রায় চার হাজার বছর সগৌরবে টিকে থাকার পর ৬৪৭ খৃঃ পুর্বাব্দে প্রথম আঘাতের সম্মুখীন হয় ব্যাবিলনের অ্যাসিরীয় রাজা অসুরবানিপালের হাতে। অল্পকিছুদিনের মধ্যেই শহরটি পুনঃনির্মিত হয়। ৫৯৭ খৃঃ পুর্বাব্দ থেকে পরবর্তি ১৫ বছরের মধ্যে ব্যাবিলনের রাজা নেবুচাদনেজার প্রাচীন ইসরাইল রাষ্ট্র ধ্বংস করে ইহুদিদেরকে ক্রীতদাস হিসেবে তার সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশে নিয়োগ করেন, যার মধ্যে অন্যতম ইহুদি নবী ড্যানিয়েল (আঃ)-ও ছিলেন। এ শহরই ছিল তার কর্মক্ষেত্র, এখানেই তিনি নবুয়তপ্রাপ্ত হন এবং এখানেই তিনি সমাধিস্থ হন। তার সমাধি দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। ইরানিদের কবর কেন্দ্রিক ধর্মীয় কালচারের নিদর্শন নবী ড্যানিয়েলের কবরেও বিদ্যমান। কবরের চারপাশে বসে মানুষ জিকিরে ব্যস্ত। কেউ কোরান পড়ছে, কেউ তাসবিহ, কেউ কবরকে সেজদা করছে। কেউবা হাত তুলে প্রার্থনা করছে, হয়তবা কবরে শায়িত ব্যক্তির কাছে তার প্রয়োজন পূরণের প্রার্থনা করছে, ইরানিরা সাধারণত যা করে থাকে। জিয়ারতকারীদের মধ্যে ইহুদিও হয়ত থাকতে পারেন, আমার জানা হয়নি।
পার্সিয়ান রাজা সাইরাস দ্য গ্রেট ৫৩৮ খৃঃ পুর্বাব্দে শহরটি দখল করেন এবং ব্যবিলন নগরী ধ্বংস করে বনি ইসরাইলদের মুক্ত করেন। পরবর্তিতে রাজা এম্বিসেস ২ একে রাজধানী করেন এবং রাজা দারিয়ুসের সময়ে (৫৪৯-৪৮৬ খৃঃ পুর্বাব্দ) এটি সম্প্রসারিত হয়। রাজা আর্দেসির ১ (৪৬৫-৪২৪ খৃঃ পুর্বাব্দ)-এর সময়ে এক ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে শহরটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। রাজা আর্দেসির ২ (৪০৪-৩৫৮) শহরটি পুনঃনির্মান করেন এবং এক বিরাটকায় বিখ্যাত হলরুম তৈরি করেন যা ‘আপাদানা’ নামে পরিচিত। আপাদানার পিলারগুলি প্রতিটি ২৩.২৫ মিটার উঁচু ছিল। ৩৩১ খৃঃ পুর্বাব্দে গ্রীক বীর আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট এ শহর দখল করেন এবং এ অঞ্চল গ্রিক সেলুসিড রাজত্বের অধীনে আসে। দীর্ঘ দিন সগৌরবে পারস্যের অন্যতম প্রধান শহর হিসেবে টিকে থাকার পর খলিফা ওমরের (রাঃ) সময়ে ৬৩৮ সালে এটি আরব অধিকারে এলে মানব সভ্যতার অবদানে ‘শুশ’ তার গুরুত্ব হারায় এবং ১২১৮ সালে মোঙ্গল আক্রমণে চূড়ান্তভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। তবে শুষ একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়নি, এখনও তার ঐতিহাসিক নিদর্শন নিয়ে তার অতীত গৌরবের জানান দিয়ে অস্তিত্ব বজায় রেখেছে। পারস্য সাম্রাজ্যের আরও তিনটি রাজধানী (পাসারগাদে, পার্সেপলিস ও একবাতান) থাকলেও শুষই ছিল সুপরিচিত ও বিখ্যাত।
Comments
শুশঃ পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন সভ্যতার শহর — No Comments
HTML tags allowed in your comment: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>