সঙ্গীর প্রতি ভালবাসা
একজন কবি। আবেগকে উস্কে দেয়া কবিদের নেশা। তার লেখা আবেগময়। কখনো হতাশা, কখনো একরাশ আকাঙ্ক্ষা, কিংবা গভীর আমন্ত্রণ মেশানো সীমাহীন অপেক্ষা। তার লেখাগুলো মাঝে মাঝেই চোখে পড়ে। ব্লাড ক্যান্সারের রোগী তিনি। একিউট প্রোমায়ালোসাইটিক লিউকেমিয়া। প্রায় আড়াই বছর চিকিৎসা হল। রোগের আর কোন চিহ্ন শরীরে নাই। আর মাত্র দু’এক মাস হলেই ওষুধ পর্ব শেষ। শুরু হবে ফলো আপ পর্ব, আরও দুই আড়াই বছর। বরাবরই ছোট ভাইকে সাথে নিয়ে আসেন। বিয়ে হয়নি অথবা স্বামী নেই।
এই টেস্টটা অনেকদিন আগের। আবার করুন।
না। আর টেস্ট করব না।
কেন?
ওষুধই তো খাইনি অনেকদিন।
কেন? বেচে থাকতে চান না?
না। অনেক দিন তো বাচলাম। আর কত?
সেকি! মাত্র বছর পঁচিশের জীবন। সেটাই অনেক হয়েছে?
তার ছোট ভাই মিট মিট করে হাসছিল। এবার সে মুখ খুলল। আসলে মিথ্যে বলছে সে। ওষুধ খেয়েছে। সবই ঠিক আছে।
আপনার রোগ যে পর্যায়ে আছে তা আর ফিরে আসার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। এবার সংসার জীবনে প্রবেশ করুন।
কথাগুলো শুনে আমার দিকে আর তাকাচ্ছিলেননা। মুহূর্তেই অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন। মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছিলো না। মনে হল অনেক কষ্ট করে অশ্রু থামানোর চেষ্টা চলছে। আরেকটু হলে মনে হয় আর থামানো যাবেনা। কিছু বুঝে উঠতে না পেরে তাকে আপাত বিব্রত করার জন্য ক্ষমা চাইলাম।
না, ঠিক আছে। বলে অশ্রু সংবরণ করে হাসার চেষ্টা করলেন।
বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের অল্পদিন পরেই লিউকেমিয়া ধরা পরে। বেচে থাকার আশা বাদ দিয়েছিলেন। বিবেকবোধ তাড়া করছিল। একজন সুস্থ্য মানুষের জন্য পীড়া দিচ্ছিল। আহা রে! একজন সুস্থ্য মানুষ কেন তার জন্য সুখ স্বাচ্ছন্দ্য নষ্ট করবে? নাহ। সঙ্গীর প্রতি ভালবাসার প্রকাশ ঘটালেন তিনি। একজন অবশ্য মৃত্যুপথ যাত্রী হয়ে তার সঙ্গীকে স্বেচ্ছায় বিদায় দিলেন। অন্যত্র বিয়ে থা করে সুখী হওয়ার সুযোগ দিলেন।
এতদিনেও পরপারে যেতে যেতে যাওয়া হয়নি। এই রোগ হয়তো আর তাকে নিবে না। এখন কি হবে? তার স্বামী কি এখনো তার জন্য অপেক্ষা করছে? তাকে কি আর ফিরে আনা যায় না? নাকি অন্যত্র বিয়ে করে সুখী হয়েছে? উত্তর পাইনি। আবার এলে হয়ত জানতে পারব।
Comments
সঙ্গীর প্রতি ভালবাসা — No Comments
HTML tags allowed in your comment: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>